
মোহাম্মদ ইউনুস ও তার উপদেষ্টা সমীপে খোলা চিঠি:
**************************************************
(মোহাম্মদ রেজাউল করিম । আপনারা আমার পরিচিতির জন্য https://rkarim.org এ যেতে পারেন) ।
***********************************************************
আমি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশের একজন সাধারন নাগরিক । আমি আপনাদের বর্তমান সরকারের জন্য আমার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু পরামর্শ ও প্রস্তাবনা রাখছি । আপনারা তা প্রাজ্ঞতার সাথে বিবেচনা করবেন বলে আশা করছি ।
(এক) ‘তত্ত্বাবধায়ক’ বা ‘অন্তর্বর্তী’ সরকারের বদলে আপনাদের নাম হোক ‘নির্ভিক সরকার’ । দেশ উল্লেখযোগ্য ভাবে একটি দূর্নীতি মুক্ত সমাজ ব্যবস্থায় উপনীত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের ক্ষমতায় থাকা জরুরী বলে আমি মনে করি । ধর্ম, বর্ন, অর্থনৈতিক অবস্থানের যে কোন আলোকে সব মানুষ যে সমান এই আদর্শে (egalitarian principles) যারা বিশ্বাস করে না তারা কোন ভাবেই যেন আপনার উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত না হয় ।
(দুই) আমাদের আজকের শ্লোগান হওয়া উচিৎ “দূর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ চাই” । ‘জয় বাংলা’ বা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগানের চেয়েও যা বেশি জরুরি । এই শ্লোগান সরকারের সব দপ্তর-অধি দপ্তরে, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনে, সংস্থায়, মিডিয়ায়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল নীতি হিসেবে প্রচার করা দরকার । সর্বত্র এটি বড় হরফে ছাপার আকারে ও নানা বিলবোর্ডে প্রকাশ-প্রচার-প্রসারের প্রয়োজন ।
আমরা জানি যে কোন সমাজকেই শতকরা একশ ভাগ দূর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব নয় । তবে এটিকে মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ধরে সব পরিকল্পনা সাজালে নিশ্চয় করে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হতে পারব ।
সিঙ্গাপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ছয় বছর অধ্যাপনার সময় দেখেছি যে কিভাবে কতগুলি শ্লোগান ও তার ভিত্তিতে নেয়া প্রকল্পের মাধ্যমে লি কুয়ান ইউ সমাজকে বদলে দিতে পেরেছিলেন । যেমন কিছু শ্লোগান ছিল এমন, “আমরা সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করব”, “আমরা সিঙ্গাপুরকে বিশ্বে একটি উদাহরন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব”, “আমরা রাস্তায় থুথু ফেলব না” ইত্যাদি ।
আমাদেরকে প্রাচীন আমলের বীর পূজা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে । সিঙ্গাপুরে লি কুয়ান ইউয়ের কোন ছবি বা মূর্তি আপনি দেখতে পাবেন না । অথচ তাকে আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক বলা হয় ।
(তিন) আমাদের বিশ্বাস যে আপনাদের ‘নির্ভিক সরকার’ দেশপ্রেম, সততা ও একগ্রতা নিয়ে কাজ করবেন । তারপরও দেশের একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু নির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরছি :
(ক) আপনাদের উপদেষ্টাদের দেশে বিদেশে রক্ষিত সব সম্পদের হিসাব বিবরনী প্রকাশ করুন । এক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের স্ত্রী ও সন্তানদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিও অন্তর্ভুক্ত করা হোক । আপনাদের বেতন-ভাতা জনসম্মুখে প্রকাশ করুন । বলা হয়ে থাকে যে “ঘর থেকেই সংস্কার শুরু হয়ে থাকে”, তাই আপনারা এক্ষেত্রে উদাহরন তৈরি করুন । আপনারা প্রত্যেকে আলাদা বড় গাড়িতে না চরে একটি মাইক্রো।ছোট গাড়িতে করে অফিসে যাতায়াত করুন যা দেশে-বিদেশে আপনাদের সম্পর্কে চমৎকার ভালো দৃষ্টান্ত তৈরি করবে । আপনারা সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারী সব কাজে বড় গাড়ি বর্জন করুন । এতে করে জ্বালানির সাশ্রয় হবে ও রাস্তার যানজট থেকে মুক্তি মিলবে ।
(খ) আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রার যোগানদাতা কারা তা ঘোষনা ও প্রচার করুন । বিদেশে আমাদের শ্রমিক, গার্মেন্টসে কাজ করা মানুষদের কাজের স্বীকৃতি দিন । কৃষি ও নানা শিল্পে কাজ করা আমাদের নাগরিকদের কাজ থেকে কিভাবে আমাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে ও সরকার চলছে তা জনগনকে বুঝতে দিন । এদেশের মালিক যে জনগন তা বলুন । এদেশ, এদেশের অর্থ সম্পদ যে তাদের তা প্রকাশ করুন । তাহলেই এদেশের প্রতিটি সম্পদের মূল্য তারা দিবে ।
ডেপুটি সেক্রেটারি/মেজর লেভেলে গাড়ি প্রদানের সরকারি সব অযৌক্তিক ব্যবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসুন । পৃথিবীর কোথাও এগুলো নেই । এমনকি সচিবদেরও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য গাড়ি প্রদানের বিলাসিতা পরিত্যাগ করুন । সেনা অফিসারদের জন্য ভূমি/জায়গা প্রদানের অসুস্থ উদ্যোগ পরিহার করুন । একমাত্র মিসর ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও এসব নেই । এমনকি ভারতেও সেনা অফিসারদের জন্য প্লট নয়, হ্রাসকৃত মূল্যে ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা আছে ।
(গ) দেশের সচিব পর্যায়ের কিছু বাসা-বাড়িতে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে যাওয়া-থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একটি গরিব দেশে যে শান শৈকতে তারা আছে তা রাষ্ট্রের অপব্যয় ও বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয় । এগুলো অবিলম্বে বন্দধ হওয়া উচিত । শেখ হাসিনা তার অবৈধ শাসনকে টিকিয়ে রাখতে চাপরাশি থেকে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত ঘুষের প্রচল করেছিল । এখন এগুলো থেকে দেশকে মুক্ত করতে যে কতটা সময় লাগবে তা খোদাতালাই বলতে পারবেন !
(ঘ) কেউ কেউ শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করতে বা দেশে নিয়ে আসতে প্রচার চালাচ্ছে । আমার মত হল, তাকে কোনভাবেই যেন ফিরিয়ে আনা না হয় । তার পাস্পোর্ট বাতিল করে তাকে বিদেশেই বাকি জীবন কাটাতে দেওয়া হোক । দেশে নিয়ে আসলে সরকারকে তার ব্যাপারে ব্যস্ত থাকতে হবে যা সরকারের অন্য ভালো কাজকর্মে ব্যাহাত সৃষ্টি করবে বলে মনে করি । অন্যদিকে মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিছে শেখ হাসিনার বিচারের ব্যবস্থা করার আশু উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি ।
(ঙ) এমূহুর্তে একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন হল, সরকারের দিক নির্দেশনা, তারা কোনদিকে যাবে । আমার মতে শতকরা একশত ভাগ একটি ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় না গিয়ে বরং একটি সমতা ভিত্তিক ভারসাম্যমূলক সমাজব্যবস্থার দিকে আমাদের যাওয়া প্রয়োজন । আমার মতে আমাদের রাষ্ট্রের যারা অংশীজন যেমন কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষিত বুদ্ধিজীবি, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, প্রকৌশলি, সামরিক-বেসামরিক আমলা, ছাত্র-জনতা সবারই উচিৎ একটি সর্বজন গ্রাহ্য সমতা ভিত্তিক সমাজ তৈরিতে সমর্থন ও অংশ নেওয়া । এভাবে আমরা বিশ্বের সামনে একটি আদর্শ রাষ্ট্রের উদাহরন তৈরির পথে অগ্রসর হতে পারি ।
(চ) ঢাকায় একজন রিক্সা চালক আমাকে বলেছিল যে তারা যান্ত্রিক রিক্সা চালনায় বাধার সম্মুখীন হন এই কারনে যে বেটারি চার্যের পর্যাপ্ত (বৈদ্যুতিক) কারেন্ট তারা পান না । কারন আমি নিজে দেখেছি যে ঢাকার অভিজাত এলাকায় (ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা, পূর্বাচল) বিভিন্ন বাসস্থানে ২৪ ঘন্টা এসি চলছে, কেউ কেউ তিনটি ফ্রিজ/ফ্রিজার ব্যবহার করছে । এগুলো একধরনের স্বার্থপর আচরন । অন্য মানুষের রুটি রোজগারকে আমলে না নিয়ে নিজের উদর পূর্তির অহমিকা । এগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরষ্পরের স্বার্থে কর্ম পরিকল্পনা হাজির করা প্রয়োজন । প্রয়োজন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাজের ও রোজগারের পথ খোলার ব্যবস্থা নেওয়া ।
(ছ) স্বজন পোষন, পক্ষপাত, দেশের সম্পদের লুটপাটের ভেতর দিয়ে গেছে আমাদের দেশের বি এন পি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও সরকার । আমাদের সাধারন জনগনের জীবন তাদের দ্বারা আজ বিপর্যস্ত । আমরা জানতে চাই কি পরিমান সম্পদ দেশের বাইরে নিয়ে গেছেন বি এন পির বর্তমান নেতা তারেক রহমান । একমাত্র তা স্বীকার করে কোটি কোটি ডলার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিলেই কেবল তাকে রাজনীতি করতে দেয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি ।
(জ) আমি মনে করি ছাত্র-জনতার গন অভ্যুথানের মাধ্যমে বর্তমানে যে সরকার ক্ষমতা নিয়েছে তাদের দ্বারাই আগামীতে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা হোক । তাতে করে পুরোনো রাজনৈতিক দল গুলোর প্রতি মানুষের মোহ ও সমর্থন কমে আসবে । তাদের পুরোনো ধ্যান ধারনা চ্যালেঞ্জের মুখোমখি হবে । মানুষ ভালো বিকল্প খুঁজে পাবে ।
আগামীতে আরো লেখার ইচ্ছে রাখছি ।
আপনাদের শুভাকাংখী,
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল করিম । বুয়েট ১৯৬৬ সাল ।
Email: rezakarim66@gmail.com
Founder of charity projects (vill:Shayampur, Upazilla: Melandah, Dis: Jamalpur):
** Rabeya-Rashid Miah memorial Trust
** Rabeya-Rashid Miah memorial academy
** Rashid Miah health care centre
** Children playing park
** Free primary children school
** Rezu Miah onudan fund for the poor
#Professor_Dr_Rezaul_Karim #rrmma #rrmmt #Prof_Dr_Rezaul_Karim #rabeya_rashid_mia_memorial_trust #Rabeya_Rashid_Mia_Memorial_Trust #RRMMT #donate